এক সময় মার্কেটে মার্কেটে ঘুরে ঘেমে ক্লান্ত হয়ে যেতেন ক্রেতারা। সঙ্গে ট্রাফিক জ্যামের অভিজ্ঞতা কেনাকাটায় আনন্দ বলতে কিছু রাখত না। এখনো এসব দৃশ্য দেখা যায়। কিন্তু অনলাইনের মাধ্যমে কেনাকাটা ক্রেতাদের এ ধরনের দুর্ভোগ অনেকটা কমিয়ে দিয়েছে। তবে অনলাইনে যাঁরা বিক্রেতা তাঁদের ঘটছে বিপরীত অভিজ্ঞতা। নিজেদের পণ্য অনলাইনে ছড়িয়ে দিতে আর ব্যবসা করতে গলদঘর্ম হতে হচ্ছে উদ্যোক্তাদের। তার ওপর আছে প্রভাবশালী আন্তর্জাতিক অনলাইন দোকানগুলোর চাপ। এতে পিষ্ট হয়ে কোনোমতে ফেসবুকের একটা পাতাই অনেকের শেষ ভরসা হয়ে দাঁড়ায়।
ইচ্ছা থাকলেও নিজের ওয়েবসাইট সাজিয়ে ব্যবসা করা হয় না অনেকের। ওয়েব ডেভেলপারের কাছে যাওয়া, আবার ওয়েবসাইটকে আকর্ষণীয় করে তোলা সব ছাড়িয়ে ক্রেতার হাতে পণ্য পৌঁছানো দুরূহ ব্যাপার হয়ে যায়। তার ওপর ওয়েবসাইটের পেছনে অর্থ খরচ ব্যবসার মূলধনকেই যেন কমিয়ে ফেলে।

নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য কিছু করতে নতুন উদ্যোক্তারাই হাজির হয়েছেন স্টোরিয়া (storrea.com) নিয়ে। স্টোরিয়া একটি প্লাটফর্ম। একটি সফটওয়্যার। মার্কেটপ্লেসে গাদাগাদির ভিড়ে নিজেদের পণ্য উপস্থাপনের প্রতিযোগিতা থেকে সরে এসে যে কেউ এ প্লাটফর্ম ব্যবহার করতে পারবে। বাড়তি কোনো কারিগরি জ্ঞানেরও প্রয়োজন নেই।
বিনা পয়সায় নিজের ঠিকানা
এ সবই হবে বিনা পয়সায়। ডোমেইন কিনে ওয়েবসাইট করতে টাকা লাগে। আর স্টোরিয়াতে অনলাইন দোকান খুলতে এক পয়সাও খরচ হবে না। সাথে আছে কিছু আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ইকমার্স সাইটের টেম্পলেট। বেছে নিন আপনার পছন্দের সাইটের টেম্পলেট।
উদ্যোক্তারা একটি মেইল অ্যাড্রেস দিয়েই হয়ে যেতে পারেন একটি অনলাইন স্টোরের মালিক। নিজের অ্যাডমিন প্যানেল থেকে নিজের মতো করে সাজাতে পারবেন নিজের অনলাইন স্টোর। উদ্যোক্তা পাবেন নিজের ডোমেইন। আপলোড করতে পারবেন বিস্তারিত বর্ণনাসহ পণ্যের ছবি। এ ছাড়া বিভিন্ন সাইজের বাহারি রঙের ব্যাপারটাও উল্লেখ করে দিতে পারেন। সাথে যোগ করে দিন পণ্যের দাম।
ক্রেতার কাছে পণ্য
ক্রেতা উদ্যোক্তার সাইটে এসে পণ্য যোগ করবেন। কার্টের তালিকায় জুড়বে পণ্য। চেকআউট করে বের হয়ে গেলে উদ্যোক্তা পাবেন ই-মেইল অ্যালার্ট। অ্যাডমিন প্যানেল থেকে উদ্যোক্তা অর্ডারগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন । শুধু তাই নয়, উদ্যোক্তা সাইটের ভিজিটর রিপোর্টও পাবেন। আর এতে উদ্যোক্তা জানতে পারবেন কতজন তার পণ্য সম্পর্কে খোঁজখবর নিচ্ছে। বিক্রেতারা তাদের ফেইসবুক পেইজের সাথেও লিংক জুড়ে দিতে পারবেন সব পণ্যের। আপাতত ক্যাশ অন ডেলিভারি সুবিধার মাধ্যমে পণ্য বিক্রির সুযোগ আছে। তবে আগামী কিছুদিনের মধ্যেই বিক্যাশ ও অন্যান্য পেমেন্ট গেটওয়ে নিজেদের সাইটে সংযুক্ত করতে পারবেন উদ্যোক্তারা। স্টোরিয়া একটি সফটওয়ার মুলতঃ। মার্কেটপ্লেস না কোন। এই সফটওয়ার ব্যবহার করে আপনি নিজের সাইট সাজাতে পারবেন।
পাশাপাশি আছে নিজের ব্র্যান্ড ভ্যালু প্রতিষ্ঠা করার মতো সুযোগ। যদি চান নিজের একটা পার্সোনাল ডোমেইন; তাও পাবেন যদি সেটি অব্যবহৃত পাওয়া যায়। আর সেই সাইটের ও পুরো নিয়ন্ত্রণ করা যাবে স্টোরিয়া অ্যাডমিন প্যানেল থেকে।
শাহনেওয়াজ শাওন, আশফাক রহমান, হাসিব বিন রফিক, সুরঞ্জন দে ও আবদুল্লাহ আল তারিক -এ পাঁচ বন্ধু মিলে স্টোরিয়া গঠনের উদ্যোগ নেন। এই তরুনরা তাদের এই উদ্যোগ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে জানান, ‘তরুণ ও নতুন উদ্যোক্তাদের নিয়ে আমরা কিছু করতে চেয়েছিলাম। একটা দোকান নেওয়া, পণ্য সাজানো ও ব্যবস্থাপনার পেছনে অনেক খরচ। এ কারণে তরুণরা অনলাইনে বিকিকিনির দিকে ঝুঁকছে। কিন্তু সেখানেও দেখা গেছে ওয়েবসাইট করতেই খরচ হয়ে যাচ্ছে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা।’ তারা বলেন, ‘আমরা নতুন উদ্যোক্তাদের প্লাটফর্মটা দিতে চেয়েছি বিনা পয়সায়। স্বাধীন ব্যবসা করার ক্ষেত্রে প্লাটফর্মটা গুরুত্বপূর্ণ। স্টোরিয়া ব্যবহার করে উদ্যোক্তা খুব সহজেই অনলাইনে ব্যবসা শুরু করতে পারবে।’ স্টোরিয়ার অফিসিয়াল স্লোগান হলঃ “Create your store, tell your story to the world.” আজই আপনার পণ্যের স্টোর খুলে জানিয়ে দিন আপনার স্টোরি সবাইকে।