জাফরীন ইসলাম // প্রতিটা মেয়ের জীবনে স্বাবলম্বী হওয়া খুব জরুরী। কিন্তু আমাদের সমাজে একজন নারীকে প্রতিষ্ঠিত হতে ঘরে – বাইরে সমাজের সব জায়গাতে নানান প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। পুরুষ তান্ত্রিক এই সমাজে মেয়েদের দুর্বল ভাবা হয়। তাদের মতে মেয়ে মানুষ মানেই হলো – ঘর সামলাবে, বাচ্চার দেখাশুনা করবে, রান্না করবে। এর বাইরে মেয়েদের নিজেদের কোন পরিচয় নেই। প্রথমে বলবে অমুকের মেয়ে, পরে অমুকের বৌ, এরপর যদি ছেলে সন্তান হয়, তবে অমুকের মা হয়েই পরিচিত হতে হয়। গৃহবন্দী থেকে একটা সময় নিজের আত্মসম্মানটুকুও আর থাকেনা।
পরিবার থেকেই প্রথম বাঁধা আসে – তুমি কি করবা? তোমাকে দিয়ে কিছু হবে না। বাইরে কাজ করবা মানে! লোকে কি বলবে? ঘরের বৌ / মেয়েকে দিয়ে রোজগার করাচ্ছি !
পরিবার থেকেই প্রথম বাঁধা আসে – তুমি কি করবা? তোমাকে দিয়ে কিছু হবে না। বাইরে কাজ করবা মানে! লোকে কি বলবে? ঘরের বৌ/মেয়েকে দিয়ে রোজগার করাচ্ছি! ওরাই বলবে, অমুকের মেয়ে এত ভাল প্রতিষ্ঠানে চাকরী করছে, অমুকের বৌ এর নিজের ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান আছে, ওরা অনেক শিক্ষিত, কত ভাল জায়গায়, টাকা খরচ করে ট্রেনিং করেছে, ও দেখতে কত সুন্দর আকর্ষনীয়। তুমি তো খুব আলসে মেয়ে, তোমাকে দিয়ে কিছু হবে না। এসব শুনে মেয়েটা মানসিক ভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে। ভাবে হয়তো আমাকে দিয়ে সত্যি কিছু হবে না, হয়তো বাইরের মানুষের সাথে আমি খাপ খাওয়াতে পারবো না, কিছু মানুষ নামের পশুর খপ্পরে পড়লে বদনাম হবে, আমায় যদি কেউ ভুল পথ দেখিয়ে দেয়! আমি তো কিছুই জানিনা, কোন কাজের প্রশিক্ষণ নিব, এত টাকা তো নেই! এসব ভাবনা ভেবে মেয়েটা মানসিক ভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে।
কিন্তু সত্যি বলতে এসব কিছুই লাগেনা। আমরা মেয়েরা একদিন যদি বিছানায় পড়ে থাকি, আমাদের সংসার এলোমেলো হয়ে যায়। সংসারে প্রতিটা মানুষের খেয়াল আমরা একা রাখি। ভোর থেকে ঘরের কাজ শুরু হয়, বাচ্চাকে খাওয়ানো, গোসল করানো, ওর স্কুলের পড়া রেডি করে, সময় মত স্কুলে পাঠানো, সংসারের খুটিনাটি প্রতিটা কাজ আমরা মেয়েরা আছি বলেই এত সুষ্ঠু ও সুন্দর ভাবে হয়। রাত পর্যন্ত হাসিমুখে ক্লান্তিহীন ভাবে কাজ করে যাই আমরা মেয়েরা। আমরা যথেষ্ঠ গুছানো ভাবে আমাদের দায়িত্ব পালন করি। আমি দেখতে তার চেয়ে কম সুন্দর, তাতে কি? আমি জানি, আমার যে যোগ্যতা আছে, তা দিয়ে আমি অনেকের চেয়ে অনেক সামনে এগিয়ে যাবো। আমি যে কাজটা পারবো বলে আমার বিশ্বাস, আমাকে শুধু এই কাজটা করতে দাও। সমাজের অনেকেই অনেক কথা বলবে, বলে। যখন আমি আমার কাজে সফল হবো, ওরাই আমার পরিবারে এমনভাবে কথা বলবে, যা শুনে পরিবারের সবাই গর্ব বোধ করবে।
www.facebook.com/jafrinsfashion
একবার/দুবার হোঁচট খেলে আবার উঠে দাঁড়ানোর সুযোগ দাও। যে যাই বলুক এটা মাথায় রাখতে হবে, আমার ঘরের যে মেয়েটি বাইরে অনেক রাত পর্যন্ত কাজ করছে, ও সেই কাজটাই করছে। তাকে বাঁধা না দিয়ে বলতে হবে, তুমি তোমার কাজ ভালভাবে শেষ কর, আমি এসে রাতে তোমাকে নিয়ে যাবো। এছাড়া প্রতিষ্ঠান গুলো থেকেও নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিটা পরিবার থেকে যদি এভাবে নারীদের সাহস, সুযোগ, সম্মান দেয়া হয় তবে আমরা নারীরা ঘরের সাথে বাইরেও সব আলোকিত করতে সক্ষম হবো।
মেয়েদের সফল উদ্যোক্তা হতে তার ইচ্ছা শক্তি উপযুক্ত প্রশিক্ষণ, পরিবার ও সমাজ থেকে সহযোগিতা, উৎসাহ আর বাইরের প্রতিষ্ঠান গুলো থেকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। যার মাধ্যমে নারীরা সফল উদ্যোক্তা হয়ে নিজেরা স্বাবলম্বী হতে পারবে এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ছেলেদের পাশাপাশি অনেক অবদান রাখতে পারবে। আমাদের সৎ সাহস নিয়ে নিজের অবস্থান শক্ত করতে হবে।