সোহেল মৃধা // ডাক বিভাগের ইতিহাস শতবর্ষের চেয়েও বেশী। একটা সময় ছিল যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ছিল এইটাই। আর সেই আমল থেকেই ডাক বিভাগের ইতিহাস-ঐতিহ্য অনেক আনন্দের, ভালবাসার, স্বপ্নের, করুণার, দুঃখের কথা বয়ে নিয়ে গেছে। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় এই ডিজিটাল যুগে এক দিকে ডাক বিভাগের প্রয়োজনীয়তা কমলেও আজ ই-কমার্স ব্যবসার জন্য ডাক বিভাগ যেন এক আশীর্বাদ, পণ্য ডেলিভারির এক অসাধারণ মাধ্যম। আজ আবার ডাক বিভাগের ঐতিহ্যকে কাজে লাগিয়ে, নতুনভাবে বাস্তবতার সাথে আধুনিকীকরণ করে ই-কমার্স ব্যবসার উন্নতির জন্য কাজে লাগাতে হবে।
ই-কমার্স ব্যবসার পণ্য ডেলিভারি এবং ক্যাশ অন ডেলিভারির টাকা পাওয়ার ক্ষেত্রে এক বৈপ্লবিক ভূমিকা রাখতে পারে বাংলাদেশ পোষ্ট বিভাগ। বাংলাদেশে পোষ্ট কোডের হিসাবে পোষ্ট অফিস আছে প্রায় ১৩৬০টির মত, তাছাড়াও আছে অসংখ্য সাব-পোষ্ট অফিস। বাংলাদেশে প্রায় ৫০০০ ইউনিয়নের প্রতিটি পোষ্ট অফিস / সাব পোষ্ট অফিসকে ই-কমার্স এর ব্যবসার নেটওয়ার্ক এর আওতায় আনা গেলে এই ব্যবসার অগ্রগতিতে এক নতুন মাত্রা যোগ হবে। বাংলাদেশের কোন কুরিয়ার সার্ভিসের ১০০ টার বেশী ব্রাঞ্চ নেই, হাতে গোনা কুরিয়ার সার্ভিস গুলোর সব ব্রাঞ্চ অফিস মিলিয়েও ৫০০ হবে কিনা সন্দেহ আছে, যা কিনা ই-কমার্স ব্যবসার সহায়ক নয়।
ডাক বিভাগকে কিছুটা আধুনিকায়ন করলে, ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ বাড়লে, আর একটু প্রশিক্ষণ থাকলেই প্রতিটি পোষ্ট অফিস/সাব পোষ্ট অফিস হয়ে উঠবে এক একটা ই-কমার্স ব্যবসার ডেলিভারি পয়েন্ট।
ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক এর মত প্রত্যন্ত অঞ্চলেও এই ডাক বিভাগকে কাজে লাগিয়ে ই-কমার্স এগিয়ে যেতে পারে বহু দূর। যত সংখ্যক মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করার সুবিধা পাবে, যত বেশী মানুষ কুরিয়ারের সুবিধা পাবে, তত বেশী এগিয়ে যাবে ই-কমার্স। পোষ্ট অফিসের আছে এক বিস্তৃত নেটওয়ার্ক, আছে অফিস, লোকবল, ডেলিভারি অভিজ্ঞতা যা তাদের নৈমিত্তিক কাজ। ডাক বিভাগকে কিছুটা আধুনিকায়ন করলে, ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ বাড়লে, আর একটু প্রশিক্ষণ থাকলেই প্রতিটি পোষ্ট অফিস/সাব পোষ্ট অফিস হয়ে উঠবে এক একটা ই-কমার্স ব্যবসার ডেলিভারি পয়েন্ট।
এতে করে যেমন ডাক বিভাগে কর্ম চাঞ্চল্য আসবে তেমনি করে দেশের অর্থনৈতিক গতিশীলতা আসবে, যার পরিমাণ মোটেও কম হবে না। ঢাকা শহরে পোষ্ট অফিস আছে ৫১টা যা অন্য কোন কুরিয়ারে নেই, এর ব্যবহার করে ই-কমার্স ব্যবসায়ীরা অতি সহজেই তাদের পণ্য ডেলিভারি দিতে পারবে পরবর্তী দিনের মধ্যে। ঢাকা বিভাগের ভিতরে আছে আনুমানিক ৩৭৫ টা, চট্টগ্রাম বিভাগে আছে ৩৩৫ টা, খুলনা বিভাগে আছে ১৬৯ টা, সিলেটে আছে ১৩০ টা, বরিশালে আছে ১১৪ টা, রাজশাহীতে আছে ১৩৩ টা, রংপুরে আছে ১৯৩ টা। এই বিস্তৃত নেটওয়ার্ককে কাজে লাগিয়ে ই-কমার্স সেক্টর হয়ে উঠবে অনুকরণীয় একটা মডেল সারা বিশ্বের মাঝে।
ই-ক্যাব ইতিমধ্যে ই-কমার্সে ডাক বিভাগের গুরুত্ব তুলে ধরে বাংলাদেশ ডাক বিভাগের সাথে একাধিক বৈঠক করেছে। এই প্রসঙ্গে ই-ক্যাবের প্রেসিডেন্ট রাজিব আহমেদ বলেন, ই-ক্যাবের সাথে ডাক বিভাগের অতি সত্বর এমওইউ সাইন হবে যাতে করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পণ্য ডেলিভারি হয় আর ক্যাশ অন ডেলিভারির টাকা যাতে পণ্য রিসিভ করার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পাওয়া যায়, যা সব ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের চাওয়া। খুব দ্রুতই প্রাথমিকভাবে এর কাজ শুরু হবে বলেও জানান তিনি।