Homeঅন্যান্যকেন এমএলএম সমর্থন করি না-১

কেন এমএলএম সমর্থন করি না-১

জাহাঙ্গীর আলম শোভন// কেন এমএলএম সমর্থন করি না –

না ভাই, আমি বলবোনা এমএলএম কোম্পানি মানুষের টাকা নিয়ে ভাগতে পারে। আমি এটাও বলবো না যে এমএলএম অবৈধ। আমি এটাও বলবোনা যে, এমএলএম নেটওয়ার্ক মার্কেটিং নয়।

তাহলে আমার যুক্তি কি? আমার যুক্তি বলার আগে আমি আপনাদের সে কথাগুলো বলবো যেগুলো এমএলএম কোম্পানীগেুলো মানুষকে প্রলুব্ধ করার জন্য বলে থাকে।

এক: প্রচলিত বিপণন ব্যবস্থায় একটি পণ্যের যদি বিক্রয়মূল্য ১০০ টাকা হয়, তাহলে তার উৎপাদন খরচ ৩৫ টাকা। বাকী ৬৫ টাকা মধ্যস্বত্তভোগীরা ভোগ করে। এখানে উৎপাদক এর পণ্য সরাসরি ভোক্তার হাতে পৌঁছে দেয়া হবে। মধ্যস্বত্তভোগীর কোনো প্রয়োজন নেই।

প্রথমত: এটা তাদের একটা ভন্ডামি। যদি তারা এটাই চাইতো তাহলে তারা প্রথমে একটা ফ্যাক্টরী খুলে উৎপাদন করতো তারপর সেটা মানুষের কাছে পৌঁছে দিত। যেহেতু কোনো এমএলএম কোম্পানির কোনো উৎপাদন বিভাগ নেই। বরং তারাও পণ্যটা অন্য কোম্পানি থেকে কিনে বা অন্য কোম্পানিকে অর্ডার দিয়ে বানায়। এবং নিজেরাই মধ্যস্বত্তভোগীর ভূমিকা নেই। সুতরাং তাদের এই কথা সঠিক নয়।

দ্বিতীয়ত: আপনারা জানেন, তারা এই যুক্তি দিয়ে মহানুভবতা দেখালেও বাস্তবে তাদের পণ্যগুলো বাজারের চেয়ে অনেক বেশী দাম ও মানের দিক থেকেও খারাপ। (আমি কোনো কোম্পানির নাম বলতে চাইনা) যাদের অভিজ্ঞতা আছে তারা জানেন।

তৃতীয়ত: দেখুন একটা ট্র্যাডিশনাল ব্যবসাতে একজন পণ্যটি উৎপাদন করেন। আরেকজন পরিবহন করেন। আরেকজন গুদামজাত করেন। আরেকজন উঠানামা করেন। আরেকজন পাইকার বা এজেন্ট হিসেবে একটা এলাকায় সরবরাহ করেন। আরেকজন স্থানীয় দোকানে সেটা বিক্রি করেন। আরেকজন সেটা প্রচার প্রসারের জন্য বিজ্ঞাপন বানান। আরেকজন বিজ্ঞাপন প্রচার করেন। এভাবে প্রত্যেকে এখান থেকে কিছু বিনিময় পান। এতেকরে কাজগুলোও হয়ে যায় আবার কিছু লোকের কর্মসংস্থান বা রুটি রুজির ব্যবস্থা হয়। এটা কোনোভাবেই খারাপ হতে পারে না। এখানে সবাই যদি উৎপাদক আর ভোক্তা হয়ে যায় তাহলে মাঝখানের এই কাজগুলো কারা করবে। আর এসব কাজ উঠিয়ে দিলেই বা দেশের কোটি কোটি মানুষের কর্মসংস্থান হবে কি করে? সুতরাং এ ধরনের উদ্ভট যুক্তি মোটেই চলে না। এটা একবার ভেবে দেখলে যে কেউ বুঝতে পারবেন।

চতুর্থত: এমএলএম যখন পণ্য বিক্রি করে সে কমিশন দশজন বা একশজনের মধ্যে ভাগাভাগি হয়। তখন সেটা কি মধ্যস্বত্তভোগী হয়না? কেই একজন দোকান দিয়ে পুঁজি খাটিয়ে লাভ করবে এটাকে তারা বলবে খারাপ আর আপনি মানুষকে ভুংভাং বুঝিয়ে টাকা নেবেন সেটাকা আবার সবাই ভাগ করে খাবেন। এটাকে তাহলে কি বলা যাবে? সুতরাং মধ্যস্বত্তভোগী বিরোধী যে বক্তব্য তারা দিয়ে থাকে তা নিছক ভাওতাভাজি ছাড়া আর কিছু নয়।

অবশ্যই কখনো কখনো দেখা যায় ১৫ টাকায় বেগুন গ্রামের কৃষক থেকে কিনে ঢাকার বাজারে ৪০ টাকায় বিক্রি হয়। তাহলেতো বেশী টাকা মধ্যস্বত্তভোগীরা খেয়ে ফেলছে। আমরা ভালো করেই জানি যে এমএলএম এসব পণ্য বেচেনা। আর কোথাও যদি কোনো অনিয়ম হয় এটা আমাদের আর্থ সামাজিক সমস্যার একটা অংশ। এটা ট্র্যাডিশনাল বাজারের দোষ নয়। আমি অন্তত চাই কৃষক ন্যায্যমূল্য পাক।

পঞ্চমত: তাদের এই বক্তব্য যদি সঠিক ও বাস্তবসম্মত হতো তাহলে সবদেশে নিশ্চয় এটা গৃহীত হতো এবং জনপ্রিয় হতো। সেটা যেহেতু হয়নি। তাই আমাদেরকে বাস্তবতাটা বুঝতে হবে।

নেটওয়ার্ক মার্কেটিং এর আইডিয়া ১৯৪০ সালে আবিষ্কৃত হয়। আর বাংলাদেশে এমএলএম আসে ১৯৯৯ সালে। নেটওয়ার্ক মার্কেটিং এর ভালোমন্দ নিয়ে এলেখায় আমার কোনো কথা নেই। আমি কেবল এমএলএম ব্যবসায়ের পক্ষে এর প্রতিনিধিগণ যে যুক্তি দেখায় সেটার অসারতা তুলে ধরলাম।

পরের পর্বে আরেকটি পয়েন্ট নিয়ে কথা বলবো আশা করি।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -spot_img

Most Popular